Post Ticker

6/recent/ticker-posts

ইংরেজী, বাংলা ও আরবী সপ্তাহ, মাস এর নাম ও ইতিহাস


 

ইংরেজী মাস

সেই রোমান পঞ্জিকার সাথে বর্তমান পঞ্জিকার অনেক পার্থক্য থাকলেও, প্রাচীন রোমান মাসের নামগুলো কিন্তু বর্তমান পঞ্জিকাতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। রোমান এই বার মাসের নামগুলোরও আলাদা অর্থ রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক এই অর্থ গুলো।

মার্চ (March)
প্রাচীন রোমে নতুন বছরের শুরুটা ছিল উৎসবের সময়। এ সময় সবরকমের যুদ্ধে বিরতি থাকত আর যেহেতু মার্চ দিয়েই তখন নতুন বছরের শুরুটা হত, তাই এর নামকরণ করা হয়েছে রোমান যুদ্ধের দেবতা ‘মার্স’ এর নামানুসারে।

এপ্রিল (APRIL)
এপ্রিলের নামকরণের পেছনে মূলত তিন রকমের মতবাদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, ল্যাটিন ভাষায় এপ্রিল অর্থ হচ্ছে দ্বিতীয় আর যেহেতু এপ্রিল তখন বছরের দ্বিতীয় মাস ছিল, তাই এভাবে এর নামকরণ হয়েছে।

কেউবা মনে করেন, করা হয়েছে ল্যাটিন শব্দ ‘এপ্রায়ার’ থেকে যার মানে হচ্ছে, উন্মোচন করা। এপ্রিলে ফুলে নতুন কুঁড়ির উন্মোচন হয় তাই এর থেকে এপ্রিল নামটা এসেছে। আবার কারো কারো ধারণা যে, এপ্রিল নামটা এসেছে, রোমান দেবী ‘আফ্রোদিতির’ থেকে।

মে (MAY)
মে এর নামকরণ করা হয়েছিলো বৃক্ষ উৎপাদনের রোমান দেবী ‘মাইয়া’ এর নাম থেকে।

জুন (JUN)
জুনকে বরাবরই বিয়ের মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই এর নামকরণও করা হয়েছে, বিয়ের দেবতাদের রাণী ‘জুনো’ এর নামানুসারে।

জুলাই (JULY)
খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪ সনে ‘জুলিয়াস সিজারের’ নামানুসারে জুলাই নামটি রাখা হয়। এর আগে জুলাইকে ‘কুয়ান্টিলাস’ বলা হত, ল্যাটিনে যার অর্থ পঞ্চম।

আগস্ট (AUGUST)
খ্রিষ্টপূর্ব ৮ সনে ‘অগাস্টাস সিজারের’ নামানুসারে আগস্ট নামটি রাখা হয় যার পূর্বনাম ছিল, ‘সেক্সটেলিয়া’ যার অর্থ ল্যাটিনে ষষ্ঠ।

সেপ্টেম্বর (SEPTEMBER)
ল্যাটিন শব্দ ‘সেপ্টেম’ থেকে এসেছে সেপ্টেম্বর নামটি যার অর্থ হচ্ছে, সপ্তম।

অক্টোবর (OCTOBER)
অষ্টমকে ল্যাটিনে বলা হয় ‘অক্টো’ যা থেকে এসেছে অক্টোবর নামটি।

নভেম্বর (NOVEMBER)
নভেম্বর এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘নভেম’ থেকে যার অর্থ নবম।

ডিসেম্বর (DECEMBER)
একইভাবে ল্যাটিন শব্দ ‘ডিসেম’ থেকে এসেছে ডিসেম্বর নামটি। ডিসেম অর্থ দশম।

জানুয়ারি (JANUARY)
সবশেষে পম্পিলিয়াস শুরু এবং শেষের দেবতা ‘জানুস’ এর নামানুসারে বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসের আবির্ভাব ঘটান।

ফেব্রুয়ারি (FEBRUARY)
সেসময় বছর শেষে, ‘ফেব্রুয়া’ নামে এক মাসব্যাপী উৎসব হত। খ্রিষ্টপূর্ব ৬৯০ সনের দিকে, তৎকালীন রোমের রাজা ‘নুমা পম্পিলিয়াস’ ফেব্রুয়া উৎসবকে মাসে রূপান্তর করে ফেলেন এবং এর থেকেই আসে ফেব্রুয়ারি।

ইংরেজী সপ্তাহ

সানডে (SUNDAY)
সানডে নামটার উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ ‘ডাইস সলিস’ থেকে যার অর্থ ‘সূর্যের দিন’

মানডে (MONDAY)
এ্যাঙ্গলো-স্যাক্সন শব্দ ‘মোনাড্যাগ’ যার অর্থ হচ্ছে ‘চাঁদের দিন’ থেকে এসেছে মানডে।

টিউসডে (TUESDAY)
নোর্স দেবতা ‘টিয়ার’ এর নামানুসারে নামকরণ করা হয় টিউসডে এর। টিয়ার হচ্ছে ওডিনের পূত্র।

ওয়েডনেসডে (WEDNESDAY)
নোর্স দেবতা ‘ওডিন’ এর নামানুসারে ওয়েডনেসডে এর নামকরণ করা হয়।

থার্সডে (THURSDAY)
নোর্স বজ্রপাতের দেবতা ‘থর’ যাকে আমরা কমবেশি সবাই চিনি, তার নামানুসারেই রাখা হয়েছে এই দিনটার নাম।

ফ্রাইডে (FRIDAY)
নোর্স দেবী ‘ফ্রিগ’ এর নামানুসারে ফ্রাইডে এর নামকরণ। ফ্রিগ হচ্ছে ওডিনের স্ত্রী।

স্যাটারডে (SATURDAY)
স্যাটারডেতে আগে রোমান দেবতা ‘স্যাটার্ন’ এর নামানুসারে ‘স্যাটার্নি’ বলা হত যার অর্থ হচ্ছে ‘শনিগ্রহের দিন’


বাংলা মাস

বাংলা মাসের নামগুলো সবকটাই এসেছে বিভিন্ন নক্ষত্রের নাম থেকে। বিশাখা নক্ষত্রের নাম থেকে এসেছে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ এসেছে জ্যেষ্ঠা থেকে। আষাঢ়ের উৎপত্তি আষাঢ়া থেকে, শ্রাবণের উৎপত্তি শ্রবণা থেকে। ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, এসেছে যথাক্রমে, ভাদ্রপদ, অশ্বিনী এবং কৃত্তিকা থেকে। অগ্রহায়ণ মাসের আরেক নাম মার্গশীর্ষ যা এসেছে মৃগশিরা থেকে। পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন এবং চৈত্রের উৎপত্তি যথাক্রমে পুষ্যা, মঘা, ফাল্গুনী এবং চিত্রা থেকে।


বাংলা সপ্তাহ

ইংরেজির মত বাংলা সপ্তাহের সাতদিনের নামকরণও করা হয়েছে দেবতা এবং গ্রহের নাম থেকে। সোমবারের নামকরণ করা হয়েছে সোম বা শিব এর নামানুসারে এবং মতান্তরে চাঁদের নামানুসারে। মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং শনিবারের নামকরণ করা হয়েছে যথাক্রমে, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র এবং শনি গ্রহের নামে। রবিবারের নামকরণ করা হয়েছে, রবি বা সূর্য দেবতার নামানুসারে।


আরবি সপ্তাহ

(১) يوم الاحد ( ইয়াওমুল আহাদ ) = রবিবার।

(২) يوم الاثنين ( ইয়াওমুল ইছনাইন) =সোমবার।

(৩) يوم الثلاثاء ( ইয়াওমুছ ছুলাছা ) = মঙ্গলবার ।

(৪) يوم الاربعاء ( ইয়াওমুল আরবিয়া ) = বুধবার।

(৫) يوم الخميس ( ইয়াওমুল খামীস) = বৃহস্পতিবার।

(৬) يوم الجمعة ( ইয়াওমুল জুমুয়া ) = শুক্রবার।

(৭) يوم السبت ( ইয়াওমুস সাব্ত ) = শনিবার।

এখানে লক্ষনীয় যে, বাংলা এবং ইংরেজীতে বারের নাম ও মাসের নাম বিভিন্ন দেব দেবীর নাম অনুসারে রাখা হলেও আরবি বারের নাম গুলে ক্রমান্বয়ে রাখা হয়েছে, এখানে কোনো দেব-দেবীর নাম গ্রহন করা হয়নি। 

একটু খেয়াল করলে দেথা যাবে, আরবি শব্দ يوم (ইয়াওমা) আয়াম শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে যার অর্খ দিন, আর يوم এর পরে সংখ্যা বাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন: আহাদা অর্থ এক, ইসনাইন (ইসনান) দুই, ..........

অর্খাৎ, বরি বার হচ্ছে প্রথম দিন, সোমবার হচ্ছে দ্বিতীয় দিন, মঙ্গলবার হচ্ছে তৃতীয়দিন, বুধবার চতুর্থ দিন, বৃহস্পতিবার পঞ্চম দিন, শুক্রবার জুম’আ -র দিন বা ষষ্ঠ দিন এবং শেষে শনিবার সপ্তম দিন 


আরবি মাস

মহররম: জাহেলি যুগে এই মাসে কোনো ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাত করা হারাম ও অবৈধ ছিল বলে এই মাসকে মুহাররমুল হারাম নামকরণ করা হয়েছে।

সফর: সফর শব্দটি সিফর থেকে নির্গত। এর অর্থ শূন্য হওয়া, জাহেলি যুগে সফর মাসে লোকেরা যুদ্ধের জন্য বের হয়ে গেলে ঘর শূন্য হয়ে যেত, তাই সফরের মাসের নাম সফর রাখা হয়েছে।

রবিউল আউয়াল: এই মাসের নামকরণকালে ফসলে রবি, অর্থাৎ বসন্তকাল ছিল। তাই এর নামকরণ হয়েছে রবিউল আউয়াল।

রবিউস সানি: এর নামকরণকালে বসন্তের শেষার্ধে পড়ার কারণে রবিউল আখের বা শেষ বসন্ত নাম রাখা হয়।

জুমাদাল উলা: জুমাদা শব্দটি এসেছে জুমুদ থেকে, যার অর্থ জমে যাওয়া, স্থবির হওয়া। যখন এই মাসের নাম রাখা হয়, তখন ঠাণ্ডার মৌসুম আরম্ভ হয়, কেননা ঠাণ্ডার কারণে বেশির ভাগ জিনিস জমে যায়। এ জন্য এ মাসের নাম এভাবে রাখা হয়।

জুমাদাল উখরা: এই মাসের নাম রাখার কারণ হচ্ছে, এই মাসের শেষে শীতের প্রচণ্ডতায় পানি পর্যন্ত জমে যেত।

রজব: রজব শব্দটি রজিব থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এর অর্থ হলো সম্মান করা। আরববাসী যেহেতু এ মাসকে সম্মান করত এবং শাহরুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর মাস বলত, তাই এ মাসের নাম রজব বা সম্মানিত মাস রাখা হয়।

শাবান: শাবান শাব শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এর অর্থ হলো বের হওয়া, প্রকাশ হওয়া, বিদীর্ণ হওয়া। যেহেতু এ মাসে বিপুল কল্যাণ প্রকাশিত হয়, মানুষের রিজিক উৎপাদন ও বণ্টিত হয় এবং তাকদিরের ফয়সালাগুলোও বণ্টন করে দেওয়া হয়। তাই এ মাসের নাম শাবান রাখা হয়েছে।

রমজান: রমজান শব্দের মূল অর্থ হচ্ছে জ্বালানো-পোড়ানো। যেহেতু এই মাসে মুমিনের গুনাহগুলো জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হয়। এ মাসের নাম রমজান রাখা হয়।

শাওয়াল: শাওয়াল শব্দটি ‘শাওল’ মূলধাতু থেকে নির্গত, অর্থ বাইরে গমন করা। এখানে আরববাসী নিজ ঘরবাড়ি ত্যাগ করে ভ্রমণে যেত। তাই এর নামকরণ করা হয় শাওয়াল।

জুলকদ/জিলকদ: ‘জুল/জিল’ অর্থ ওয়ালা আর ‘কাদাহ’ অর্থ বসা, যেহেতু এ মাস সম্মানিত মাসের একটি। আরবরা এ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করে বাড়িতে বসে থাকত।

জুলহজ/জিলহজ: জুলহজ/জিলহজ শব্দটি সম্ভবত হাজ্জাহ থেকে নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ একবার হজ করা। অথবা শব্দটি ‘হিজ’ শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে। এর মানে অর্থবছর। যেহেতু এই মাস বছরের শেষাংশে আসে এবং এর দ্বারাই পূর্ণ বছরের সমাপ্তি ঘটে, তাই এই মাসের নামকরণ হয়েছে জুলহজ/জিলহজ।


Reference: 

Post a Comment

0 Comments